Tempting Tripura

মানিক্য রাজার দেশে  

 

 

দেশে বাংলা ও বাঙালীর দ্বিতীয় ঘর,  উত্তর পূবের সাত বোনের  অন্যতম ত্রিপুরা । এই আধুনিক ভারতে এখনও যে সব জায়গায় রাজবংশের হদিশ পাওয়া যায় তার মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম । এই রাজ্যের ইতিহাসের সঙ্গে জড়য়ে আছে প্রায় ১৩০০ বছরের রাজকীয় ইতিহাস । ইন্দো-মঙ্গোলিয়ান বংশজাত  মানিক্য রাজবংশের নানন গল্প ছড়িয়ে আছে এখানকার বাতাসে । সেই ইতিহাসের সুত্র ধরেই বাঙালির ভ্রমণের অন্যতম গন্তব্য ত্রিপুরা ।

আমাদের ত্রিপুরার ভ্রমণ কেন্দ্রীকতা প্রধানত আগরতলাকে কেন্দ্র করেই । তবে রাজবংশের ইতিহাস ছাড়ও এখানকার আদিবাসি জীবন যাত্রাও আমাদের গন্তব্য । আর আদিবাসি জীবন ছড়িয়ে রয়েছে আগরতলার চারপাশে । এসবের সঙ্গে মানিয়ে প্রকৃতি নিজের করে সাজিয়ে তুলেছে ত্রিপুরাকে ।

যাই হোক আগরতলায় প্রথমেই দেখে নিতে হবে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ । শহরের মাঝখানে লেকে ঘেরা ত্রিতল প্রাসাদ ।  মাথায় ৮০ ফুট উচু গম্বুজ । আগে এই প্রাসাদের অবস্থান ছিল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে । ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর মহারাজা রাধাকিশর মানিক্য শহরের প্রান কেন্দ্রে তৈরি করেন নতুন এই প্রাসাদ । প্রাসাদের ঝকঝকে কারুকাজের পাশাপাশি নবতম সংযোজন মিউজিক্যাল ফাউনটেন ।

ত্রিপুরার বাঙালিদের অন্যতম গন্তব্য, শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরের ১৪ দেবতার মন্দী, ও মন্দীর লাগোয়া বিদ্ধস্ত প্রাসাদ । জুলাই মাসে এখানকার জমকালো উৎসব দেখার মতো । উৎসবে ১৪ জন উপজাতি দেবতারা আসেন এখানে । এই মন্দীরের সবকিছু বাঙালি ধারার হলেও মাথার গম্বুজ গুলি বৌদ্ধস্তুপের আদলে তৈরি । মন্দীরে সারা বছরের জন্য মহাদেব আর বুদ্ধদেবের অবস্থান । দুই দেবতাই অষ্ট ধাতুর । শহরের গোরাবাজার থেকে ১ নম্বর রুটের বাসে খয়েরপুর নেমে ১৪ দেবতার মন্দীরে যাওয়া যায় । থাকার সংকুলান নেই তাই সন্ধার আগেই ফিরতে হল আগরতলায় ।

শহরের ২৪ কিলোমিটার দূরে সিপাহীজলা । এখানে রয়েছে লেক, ওয়াইলডলাইফ সাংচুয়ারি জ্যুলজিক্যাল ও বটানিক্যাল গাডেন  । ৫৩ রকমের স্তন্যপায়ী প্রানীর বসবাস এখানে । রয়েছে ভাল্লুক, নীলগাই, চশমা বানর । পুরোজলা ঘিরে রয়েছে টয়ট্রেন । লেকের জলে বোটিং এর ব্যবস্থা রয়েছে । সিপাহীজলার আর একটা উপভোগ্য  জিনিস গোলমরিচের খেত ।

সিপাহীজলা থেকে ২৮কিলোমিটার দূরে উদয়পুর । মগরাজের রাজধানী । মাহারাজা উদয় মানিক্যের হতে তৈরি এই উদয়পুর । আমাদের উদয়পুর ভ্রমণ কনডাকটেড ট্যুরে । মন্দির আর তার অসামান্য স্থাপত্য এই উদয়পুরের প্রধান দ্রষ্টব্য ।

ত্রিপুরা ভ্রমণের অন্যতম গন্তব্য ঊনকোটি । রাজ্যেরই উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত এই ঊনকোটি । আগরতলা থেকে বাসে ৭ ঘণ্টায় ধর্মনগর সেখান থেকে আরও ১০ কিলোমিটার । আগরতলা থেকে মোট ১৮৬ কিলোমিটার । কৈলাসহর হয়েও যাওয়া  যায় ঊনকোটি, তবে সে পথের পরিমাণ বেশী । কোটি থেকে এক কম তাই ঊনকোটি । ৪৫ মিটার উঁচু রঘুনন্দন পাহাড় কেটে খোদাই করা পুণ্য হিন্দু তীথ । আগে এর নাম ছিল ছাম্বুল । পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা রয়েছে বিভিন্ন দেবদেবী । দেশের বৃহত্তম ( ৩০ ফুট ) খোদাই কাজ এখানেই । ১২ মিটার উঁচু শিব এখানে কালভৈরব নামে পরিচিত । যার মাহাত্ম্য লোকের মুখে মুখে ফেরে ।

ঊনকোটি থেকে বেরিয়ে ধর্মনগরের বাসে আমরা চলে গেলম প্যাঁচারথল । সেখান থেকে  অটোতে কাঞ্চনপুর । এই রুটে বাসও পাওয়া যায় । কাঞ্চনপুরে রাত্রি বাসের জন্য পি ডবলু ডি বাংলো রয়েছে । পর দিন সাত সকালে ভাড়ার জিপে চেপে রাওনা দিলাম চির বসন্তের দেশ জম্পুই পাহাড়ে । আগরতলা থেকে সরাসরি বাসও যাচ্ছে জম্পুই পাহাড়ে । মোট ৬ টা পাহাড়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী লুসাই উপজাতিদের বাস । তাদের সমাজ জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে পাশ্চাত্যের রঙ রূপ । জম্পুই পাহাড়ের শোভা বাড়ায় হরেক রঙের অর্কিড ।

এছাড়া দেখার মতো আরও অনেক জিনিস ছড়িয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে । তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ডম্বুর ফলস, পিলাক, তৃষ্ণা ওয়াইলডলাইফ সাংচুয়ারি, ব্রম্ভা কুণ্ড, কসবা, ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির । যাদের প্রত্যেকের রূপ একে অন্যের রূপকে টপকে যায় ।

কোলকাতা থেকে আগরতলা যাওয়ার সহজ পথ অবশ্যই বিমান । বতর্মানে আগরতলা রেলের সঙ্গে যুক্ত হলেও কোলকাতা থেকে আগরতলা পৌঁছাতে সময় লাগবে আড়াই দিন । আর খরচও মোটামুটি বিমান ভাড়ার সমান । কোলকাতা থেকে আগরতলা যেতে বিমানে সময় লাগবে ৫০ মিনিটের মতো । কোলকাতা থেকে সরাসরি আগরতলা, ও গুয়াহাটি হয়ে আগ্রতলার বিমান রয়েছে । ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় হোটেলের কমতি নেই । বাজেট অনুজায়ী  হোটেল মেলে শহর জুড়ে ।

 

Arpan Dey – ৯৪৩৪৫০১১২০DSC00044

 

 


Leave a comment